ওয়েক আপ সিড
"জাগো সিড"
এক মায়াবতীর স্পর্শ এ এক অগোছালো ছেলের জীবনে প্রাণ ফিরে পাওয়ার গল্প
১৮- ২০ বছর বয়স ১ টা ক্রান্তিকাল। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ এর মাঝের সময়। সুকান্ত তার "আঠারো বছর বয়স" কবিতায় লিখেছিলেন
আঠারো বছর বয়স কি দুঃসহ
স্পর্ধায় নেয় মাথা তুলবার ঝুকি"
সুকান্তের কবিতা সত্য।সাথে এটাও সত্য এই বয়স টায় বেশিরভাগ ই থাকে ইম্ম্যাচিউর।
এই বয়স টা জীবনের এমন ১ টা স্টেজ যেটা কেউ অস্বীকার করতে পারে না।ইম্ম্যাচিউর থেকে আস্তে আস্তে ম্যাচিউর হওয়ার প্রসেস টা দেখানো হয়েছে।এই মুভিতে রানবীরের এক্টিং এ,অয়ন মুখার্জীর ডিরেকশনে আমি আমাকে খুজে পেয়েছি।ইন ফ্যাক্ট সবাই নিজের সাথে কোরিলেট করতে পারবে ওই স্টেজ টা।
২০ বছরের সিদ্ধার্থ মেহেরা (রনবীর কাপুর)ধনীর বখে যাওয়া, লক্ষ্যহীন,উদাসীন এক পুত্র।ভবিষ্যৎ নিয়ে তার কোন প্ল্যান নাই,বর্তমান নিয়েও নাই,তিনি শুধু বাপের টাকা উড়িয়ে জীবন এঞ্জয় করতে চান।কিন্তু জীবন ত আর একভাবে যায় না,একদিন দেখা হয়ে গেল মুম্বাইয়ে আগত স্বাধীন,পরিশ্রমী,সংগ্রামী এক মেয়ের(কংকনা সেনশর্মা) সাথে যার ইচ্ছে লেখিকা হওয়া।অতঃপর বন্ধুত্ব।সারাবছর খালি এঞ্জয় ই করার কারণে পরীক্ষায় ফেইল করে রনবীর এবং তার বন্ধুরা পাশ করে যায়।এতে সে হতাশ হয়ে বাসায় ঝগড়া করে কংকনার কাছে চলে আসে।দুজনের এক ফ্ল্যাটে রুম শেয়ার,এবং তখন থেকে গল্প অন্যদিকে বাক নেয়।
কংকনা সেন শর্মা ছিলেন শোস্টিলার।তাকে যোগ্য সাপোর্ট দিয়ে গেছেন রনবীর কাপুর। সাবলীল এক্টিং ছিল।তাদের কেমিস্ট্রি অসাধারণ! আমার ত মনে হয় রনবীরের এযাবৎকালের সবচেয়ে ভাল পেয়ারিং হয়েছে কংকনার সাথে।
সাপোর্টিং কাস্ট, অনুপম খের,কংকনার ফ্ল্যাটের পাশের হটি কাশ্মীরা শাহ,বন্ধু নমিত দাস,সুপ্রিয়া পাঠক প্রত্যেকে অসাধারণ। ডেবুট্যান্ট ডিরেক্টর অয়ন মুখার্জীর ডিরেকশন ছিল প্রথম শ্রেণীর।ডায়লগ,সিনেমাটোগ্রাফি, প্রতিটি ডিটেইল ছিল মুগ্ধ করার মত।
রনবীরের ডিমভাজি করতে না পারা,মা সুপ্রিয়া পাঠকের ইংরেজি শেখা বা ভুল ইংরেজী বলা ছেলেকে বন্ধু হিসেবে কাছে রাখার জন্য,সবি ছিল পারফেক্ট
এই মুভিতে ব্রিষ্টি এসেছে উপভোগ করার জন্য,যা নরমালি অন্য হিন্দি মুভিগুলাতে দেখা যায় না।রনবীর যেভাবে চেহারা এগিয়ে দিল রেইনকে উপভোগ করার জন্য,তা দেখে হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের নায়কের কথা মনে পড়ে গেল।হুমায়ুনের নায়ক নায়িকারা এভাবে রেইনে ভিজে,উপভোগ করে।
মুভির গান হ্রদয়গ্রাহী,বিশেষকরে অমিত ত্রিবেদীর"ইকতারা"
মুভিটা আপনাকে শিক্ষা দিবে জীবনের ছোট ছোট ব্যাপারে আনন্দ খুজতে।সেটা হতে পারে রাতে ছাদে গিয়ে দুজনে মিলে দু কাপ চা খেতে খেতে বার্থডে সেলিব্রেট করা।
মূল ব্যাপার আপনার দ্রিষ্টিভংগী। জীবনকে আপনি কোন আউটলুকে দেখছেন।যেমনঃআমাদের সমাজে কেউ এ প্লাস পেয়েও খুশি হয় না,আবার কেউ ৪.৫ পেয়েও খুশি।
উপমহাদেশীয় বাবা মায়েরা সাধারণত চান সন্তান ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজনেস্ম্যান,এইসব প্রথাগত জব করবে।মুভিটি প্রমোট করছে অপ্রথাগত চাকরিকে বেছে নিতে।রনবীর সেই কাজটিকেই পেশা হিসেবে নিয়েছে, যা ছিল তার নেশা,ফটোগ্রাফি।আর নেশা যখন পেশা হয়, জব লাইফ কতটা আনন্দময় হয় বলার অপেক্ষা থাকে না।
রনবীর আর কংকনা সেন শর্মার সাথে এই মুভির আরেকটি মেইন প্রোটাগনিস্ট কে জানেন?
মুম্বাই শহর
এই শহরের যৌবন, সংস্কৃতি, শহরের তীরের সাগর ক্যামেরার কারসাজিতে দর্শকের চোখে মনোমুগ্ধকর আর কংকনার চোখে তার "স্বপ্ন পূরণের শহর " হয়ে ধরা দিয়েছে।
রনবীর কংকনা কে প্রপোজ করে,কিন্তু চাইল্ডিশ বলে কংকনা তাকে রিফিউজ করে,শুরু হিয় রনবীরের নিজেকে প্রমাণ করা।মুম্বাই বীটে জব পেতে হেল্প করা থেকে, খাবার বানানো, রনবীর কে মেন্টাল সাপোর্ট দেয়া সবেতেই কংকনা ছিল রনবীরের পাশে। এক সময় বাবা মেনে নিলে রনবীর চলে যায় নিজ বাড়িতে!!! কিন্তু ততক্ষণে কংকনা তার প্রেমে পড়ে গেসে!!
তাই যাওয়ার দিন কংকনা খুব রিএক্ট করে।বাসায় বসে রনবীর মুম্বাই বীটের নিউ এডিশনের কংকনার "নিউ গার্ল ইন দ্যা সিটি " পড়ে সে বুঝতে পারে,
এই মুম্বাইয়,তার ফ্রেশ হাওয়া,তার ব্রিষ্টি সবকিছু মেয়েটির এত ভালো লাগে কারণ সেই চাইল্ডিশ সিড তার পাশে ছিল।আবারো ব্রিষ্টির মধ্যে ২ জনের দেখা হওয়া সেই সীবীচে,যেখানে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল,অতঃপর উষ্ণ আলিংগন।
কংকনা ছিল রনবীরের খা খা মরুভূমির রৌদ্রতপ্ত জীবনে জীবনে এক পশ্লা শীতল বারিধারা।
আসলে প্রতিটি অগোছালো ছেলেই চায় কেউ একজিন জীবনে এসে জীবন গুছিয়ে দিয়ে যাক,অবশ্য অনেক অগোছালো মেয়েও চায় (যেমন আমি)
পুরো মুভিটাই ছিল লাইফ লেসন।যদিও ছেলেমেয়ে রুম্মেট ব্যাপার টি ভালো লাগে নি,এছাড়া বাকীসব ঠিক আছে।এক কথায় "সিম্পলের ভিতর হাইলি গর্জিয়াস"।ছবি দেখার সময় এত ফ্রেশ ফিল হবে,মনে হয় ছবিটা পুরোটাই ১ টা ঠান্ডা হাওয়া
ওয়েক আপ সিড মানে
" গ্রো আপ সিড"
"দ্বায়িত্ব নাও সিড"
[কার্টেসি: নন্দিনী নন্দিনী]
0 Comments