Vinchi Da Movie Review | ভিঞ্চি দা ছবির গল্প।

Vinci_Da / ভিঞ্চি দা

" The art of revenge, the revenge of art"

অসাধারণ এই ট্যাগ লাইনটাই সর্বপ্রথম সবার মন ছুঁয়ে গেছে । আজকের বাংলা সিনেমা জগতে যে গতে বাঁধা নাচ গানের সিনেমা ছাড়াও অন্যরকম কিছু অর্থপূর্ণ সিনেমা হচ্ছে তা দর্শকদের অজানা নয়। এবার ব্যাপারটা হচ্ছে কোন সিনেমার গল্প বেশি অর্থ বহন করতে পারছে তাই নিয়েই এখন টলি পাড়ায় প্রতিযোগিতা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা না, সাংস্কৃতিক সুস্থ প্রতিযোগিতা। আর আমার মতে সেই প্রতিযোগিতার খাতায় বেশ শক্তপোক্ত ভাবে নাম লিখিয়ে ফেলেছে ভিঞ্চি দা।

ধরুন আপনি একটা গল্প পড়ছেন আর প্রথমেই ক্রিমিনাল কে দেখিয়ে দিলো ।ভালো লাগবে কি ? ওইখানেই তো সব সাসপেন্স শেষ । কিন্তু না, এইখানে স্টোরি রাইটার তার প্রতিভার পরিচয়টা অসাধারণ ভাবে দিয়ে দিয়েছেন। প্রথম থেকেই দর্শকের চোখের সামনে সব পরিষ্কার যে কে কি করছে কিন্তু তাও যেন এক আকাট ধোঁয়াশা পুরো গল্প জুড়ে, শেষ অবধি , ঠিক কি হতে চলেছে তার উত্তেজনায়। তবে এটুকু বলা যায় যে নেগেটিভ চরিত্রটিকে দেখানো হয়েছে তার মানসিক বিকৃতিটা বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন পরিচালক ।কোনরকম উদ্ভট পাগলামির এক্সপ্রেশন ছাড়াই ঋত্বিক চক্রবর্তীর মধ্যে দিয়ে কথা বলেছে আদি বোস। এই আদি বোসের একটা ভয়ঙ্কর অতীত আছে আর সেইখান থেকেই শিল্পের প্রতিশোধ শুরু ।সাধারণ মানুষের সাথে ঘটা সমস্ত দুর্নীতির প্রতিশোধ নিতে গিয়ে কিভাবে সেও সাধারণ মানুষের ক্ষতি করতে শুরু করে আর প্রতিশোধ একটা শিল্প হয়ে দাঁড়ায় সেটাই এই সিনেমার প্রধান ক্রাইম।

 রুদ্রনীল ঘোষ আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছেন যে ওনাকে একটাই শব্দ দিয়ে মাপা যায় "অতুলনীয়", এত সাবলীল, এত সুন্দর অভিনয় বড়পর্দায় বহুদিন বাদে দেখা গেল। সিনেমাতে উনি শিল্পী- দেবু হালদার ।শিল্পের প্রতি যার অবিশ্বাস্য প্রেম , সেই শৈল্পিক সত্ত্বা উনি যেভাবে পুরো গল্প জুড়ে বহন করেছেন সেটা অসাধারন । এখানে বলে রাখা ভালো ভিঞ্চি দা  রুদ্রনীল ঘোষের ভাবনার ফসল । সেই ভাবনা কে রূপ দিয়েছেন সৃজিত মুখার্জী । দেবু হালদার বিশ্বাস করেন শিল্পটা বিজ্ঞান আর বিজ্ঞান হলো শিল্প । লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মতোই তার জীবন জুড়ে আছে প্রেম, পাওয়া- না পাওয়া ,আশা- হতাশা ।

অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য  মানুষটি এত বহুমুখী, এত প্রতিভাবান যে যে কোনো চরিত্রকে নিজের করে নেন। এই সিনেমায় উনি একজন পুলিশের ভূমিকায়, খুবই কম স্ক্রীন প্রেজেন্স কিন্তু যেই সময়টুকু ছিলেন, পুরো জমজমাট করে দিয়েছেন।

ঋদ্ধি সেন, সিনেমার শুরুতে হয়ত পাঁচ মিনিটের একটা সিনে ছিলেন । ওই কয়েক মুহূর্তে ঋদ্ধি যা করেছেন, প্রমাণ হয়ে গেছে যে ভবিষ্যত বাংলা সিনেমার জগৎ খুব ভালোভাবে সুরক্ষিত।

এরপরে আসি আমাদের ভিলেন, ঋত্বিক চক্রবর্তী । অসাধারণ স্ক্রীন প্রেসেন্স, অসাধারণ ভাবে অভিনয়ের ভিতর অভিনয়, কথা বলা, চোখের চলন, মুখের ভাব, বিরক্তি ফুটিয়ে তোলা, ধমক দেওয়ার স্টাইল, প্রতিটা জিনিস খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে উনি কেন আজকের বাংলা সিনেমায় ডিরেক্টর দের প্রথম পছন্দ।

সোহিনী সরকার এর খুব কম সময় ছিলেন গল্পতে, তোতলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এবং যথেষ্ট ভালোভাবে পুরো চরিত্র কে ধরে রেখেছেন। ওনার অভিনীত চরিত্রটি  একটি নিরগুন মেয়ের তবে যেভাবে ভনিতাহীন একটা মুখ ফুটিয়ে তুলেছেন সেটা প্রশংসনীয় ।

সিনেমায় যে তিনটি গান ব্যাবহৃত হয়েছে এবং যে সময়ে ব্যাবহৃত হয়েছে, দর্শকের সাথে খুব ভালোভাবে কানেক্ট করেছে বলা যায়। নোবেল এর গলায় #TomarMonerVetor প্রচণ্ড শক্তিশালী একটা গান। অনুপম রায়ের লিরিক্স আর বাংলাদেশের ছেলের গলা মিলিয়ে গানটি গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতন । গানটা ভালো ভাবে শুনলে বোঝা যায় গল্পটাও যেনো কিছুটা বলে দেওয়া হয়েছে । গ্যাস বেলুন এবং শান্ত হও .. অনুপম রায়ের এই দুটি গান তো দর্শকদের কাছে কানের আরাম বলা যায়।

কিছু কিছু জায়গায় দর্শক এর হয়তো মনে হতে পারে একটু ভুল আছে। এছাড়াও কিছু জায়গায় হয়ত আরো ভালো করা যেত। কিন্তু সিনেমা একটা শিল্প আর প্রত্যেক শিল্প নিজের মধ্যে সুন্দর । তাই সেই ভুলগুলো এতই সূক্ষ্ম যে পুরো সিনেমায় সাংঘাতিক অভিনয়, প্রতিভা আর গল্প দিয়ে তা চাপা পড়ে গেছে।

বহুদিন বাদে সৃজিত মুখোপাধ্যায় কে এমন একটা ভিজ্যুয়াল ট্রিট দেওয়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

সিনেমার ক্লাইম্যাক্স টা যতক্ষণ না দেখবেন ততক্ষন ওই ট্যাগলাইনের মর্ম বোঝা সম্ভব না। হলে গিয়ে দেখে আসুন, আবার কবে এরকম টানটান উত্তেজনার সিনেমা বাংলায় দেখতে পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ ভালো জিনিস হঠাৎ হঠাৎ চলে আসে । হাতছাড়া করলে কিন্তু আপনারই লস ।

কলমে : অপরাজিতা মজুমদার

Post a Comment

0 Comments